গলদা চিংড়ির রোগ প্রতিরোধের উপায়সমূহ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

পলদা চিংড়ি চাষে চিংড়ির রোগবালাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ চিংড়ির রোগ চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট জটিল এবং ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে চিংড়ির রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই শ্রেয়। রোগবালাই প্রাদুর্ভাবের কারণসমূহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নিচে রোগ প্রতিরোধের উপায়সমূহ বর্ণানা করা হলো- 

Content added By

পরিবেশ উন্নয়ন

চিংড়ি চাষে পরিবেশের উপর নিবিড় নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করা যাতে পারিবেশিক পীড়ন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চিংড়ির সুস্থ ও সবল স্বাস্থ্যের জন্য এসব প্রভাবক অনুকূল মাত্রায় থাকলে রোগ প্রতিরোধের সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

পরিবেশের উপর নিবিড় নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকগুলোর উপর লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন-

  • পানির দ্রবীভূত অক্সিজেন
  • পানির পিএইচ (pH) ও তাপমাত্রা
  • কীটনাশকের ব্যবহার
  • পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হাইড্রোজেন সালফাইড এর উপস্থিতি
  • অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ বা রাসায়নিক সার ব্যবহার জনিত কারণে অ্যামোনিয়া সৃষ্টি
  • কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর উপস্থিতি
  • শেওলাজাতীয় পদার্থ পচনের ফলে উৎপন্ন বিষাক্ত পদার্থ 
  • পুকুরের তলদেশে পুঞ্জীভূত জৈব পদার্থ প্রভৃতি।
Content added || updated By

ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন

গলদা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে উন্নত ব্যবস্থাপনা চিংড়ির রোগবালাই প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে সঠিক ঘনত্বে ও সঠিক পদ্ধতিতে চিংড়ির পোনা মজুদ করা প্রয়োজন, যাতে পুকুরের পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ সহনশীল মাত্রায় বজায় থাকে এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এজন্য, সুস্থ ও সবল পোনা সংগ্রহ করে তা ঘের বা পুকুরে মজুদ করা উচিত। এছাড়া ব্যবস্থাপনাজনিত পীড়ন নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে পোনা স্থানান্তরের সময় হাত দিয়ে পোনাকে স্পর্শ না করা, পোনা নাড়াচাড়া না করা, অধিক ঘনত্বে পোনা পরিবহন না করা এবং অধিক গরমে বা তাপমাত্রায় পোনা স্থানান্তর, পরিবহন ও পুকুরে মজুদ না করা প্রভৃতি বিষয় গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার।

চিংড়ি খামারে বা পুকুরে অবাঞ্ছিত মাছ ও প্রাণির প্রবেশ রোধ করে পুকুরকে বহিরাগত রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখা যায় । এজন্য পুকুরের আগমন ও নির্গমন নালা প্রয়োজনমত বন্ধ রাখা, পুকুরের পাড় বন্যার কবল থেকে রক্ষা করা, পুকুরে ক্ষতিকারক পাখি বসতে না দেয়া এবং কাপড় চোপড় না ধোয়া প্রভৃতি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার।

বহিরাগত রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে জলাশয় কে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে পোনা সংগ্রহের জাল, পরিবহন পাত্র, চিংড়ি ধরার জাল প্রভৃতি ব্যবহারের পূর্বে ও পরে জীবাণুনাশক উপকরণ যারা জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। নিয়মিত পুকুর পর্যবেক্ষণ করা এবং কোনো কারণে মৃত বা রোগাক্রান্ত চিংড়ি তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করা যাতে খামারের অন্য চিংড়ি রোগাক্রান্ত হতে না পারে। এছাড়া লক্ষণ অনুযায়ী রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

Content added By

সুষম খাদ্য নিশ্চিতকরণ

চিংড়ির প্রয়োজনীয় পুষ্টিসাধন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বজায় রাখার জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। চিংড়ির মোট দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা, খাদ্যের গুণাগুণ পরীক্ষা করা এবং সময় মত খাবার দেয়া প্রভৃতি বিষয়ে লক্ষ রাখা আবশ্যক। এ ছাড়াও নিয়মিত জাল টেনে চিংড়ির বৃদ্ধির হার এবং স্বাস্থ্য ও রোগবালাই পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে খামারের উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়। এ ছাড়াও পুকুরে খাদ্য প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে বড় আকারের গলদা চিংড়ি পুকুর থেকে সরিয়ে ফেললে ভাল ফল পাওয়া যায়। কারণ অপেক্ষাকৃত বড় চিংড়ি খাদ্য প্রতিযোগিতায় প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে এবং ছোট আকারের চিংড়ি কাংখিত মাত্রায় বড় হতে পারে না।

রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধের তুলনামূলক সুবিধা

ক্রম রোগ প্রতিরোধরোগ প্রতিকার
তুলনামূলক সহজতুলনামূলক জটিল
আর্থিকভাবে লাভজনকআর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি
চিংড়ির গুণগতমান ভালো থাবেগুণগতমান খারাপ হয়
পরিকল্পনামাফিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভবভবিষ্যদ্বাণী সম্ভব হয় না
রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার কমরাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বেশি
পরিবেশ সহনীয়পরিবেশ সহনীয় নয়
টেকসইটেকসই নয়

 

Content added By
Promotion